বিল্ডিং কোড মানা হলে বড় ধরনের ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা কমে আসবে।
কিন্তু সমস্যা হলো মানুষ ভূমিকম্প হলে যতটা আতঙ্কিত বোধ করে, ভবন নির্মাণের সময় সেই আতঙ্ক তাদের মধ্যে আর থাকে না।
আজ সকালের ভূমিকম্পের তীব্রতা গত ৫০-৬০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল নরসিংদীর মাধবদী এবং রিখটার স্কেলে এর তীব্রতা ছিল ৫ দশমিক ৭। ভূতাত্ত্বিক হিসেবে আমরা দেখার চেষ্টা করি ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থলের আশপাশে কোনো ফল্টলাইন আছে কিনা। নরসিংদীতে শীতলক্ষ্যা নদী বয়ে গেছে। এটি একটি লিনিয়ার (ফল্টলাইনযুক্ত) নদী। আজকের ভূমিকম্প এ নদীর ফল্টলাইন থেকে সৃষ্টি হয়েছে বলে ধারণা করা যাচ্ছে।
মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্প বাংলাদেশে প্রথমবার হচ্ছে না। এর আগেও আমরা কমবেশি ৫ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্প দেখেছি। তবে আজকের ভূমিকম্পটির তীব্রতা তুলনামূলক বেশি অনুভূত হয়েছে। যে কারণে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক দেখা যাচ্ছে। তবে ৫ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্পে আতঙ্কিত হওয়ার তেমন কোনো কারণ নেই। বাংলাদেশ মাঝারি মানের ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চল। তাই এখানে মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্প হওয়াটা অস্বাভাবিক না। তবে এটিও ঠিক যে অতীতে এ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ৭ থেকে ৭ দশমিক ৫ মাত্রার ভূমিকম্পের ঘটনা ঘটেছে। উদাহরণ হিসেবে ১৮৮৫ সালে মানিকগঞ্জ ও ১৯১৮ সালে শ্রীমঙ্গলের ভূমিকম্পের কথা বলা যায়। এ থেকে অনুমান করা যায়, দেশে আগামীতেও এ মাত্রার ভূমিকম্প হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।
এটি মাথায় রেখেই ভূমিকম্প সহনশীল বিল্ডিং কোড করা হয়েছিল। কারণ বিল্ডিং কোড মানা হলে বড় ধরনের ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা কমে আসবে। কিন্তু সমস্যা হলো মানুষ ভূমিকম্প হলে যতটা আতঙ্কিত বোধ করে, ভবন নির্মাণের সময় সেই আতঙ্ক তাদের মধ্যে আর থাকে না। যে কারণে আজকের মাঝারি মানের ভূমিকম্পেই নানা জায়গায় ভবনে ফাটল দেখা দিয়েছে, ভবন হেলে পড়েছে। এছাড়া সচেতনতার অভাবে হতাহতের ঘটনাও ঘটেছে। মানুষকে সচেতন ও সতর্ক করা না গেলে ভবিষ্যতে আজকের মতো মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ও হতাহতের সংখ্যা আরো বাড়বে।
লেখক–
ড. মো. জিল্লুর রহমান
ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ ও অধ্যাপক
ডিজাস্টার সায়েন্স অ্যান্ড ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্স বিভাগ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
