news paper

চাঁপাইনবাবগঞ্জে বিভিন্ন স্থানে সাঁওতাল বিদ্রোহ দিবস উদযাপন

মহান সাঁওতাল বিদ্রোহের ১৭০তম দিবস উপলক্ষে চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে।

এনএজিআর (ন্যাশনাল এজেন্সি ফর গ্রিণ রিভ্যুলেশন) সংস্থার আয়োজনে এবং মেনোনাইট সেন্ট্রাল কমিটি’র অর্থায়নে উত্তরবঙ্গ আদিবাসী ফোরাম ও আমনুরা মিশন যুব উন্নয়ন সংঘের সহযোগিতায় আমনুরা মিশন স্কুল মাঠে সাঁওতাল বিদ্রোহ দিবস ও সাঁওতালি সংস্কৃতি মেলা-২০২৫ অনুষ্ঠিত হয়।

অন্যদিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলা মাঝি ও পারগানা পরিষদের আয়োজনে ও এসআইএল ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ এর সহযোগিতায় আতাহার যুগিডাইং এলাকায় আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়।

আমনুরা মিশন স্কুল মাঠে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোঃ নাকিব হাসান তরফদার, বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন সদর উপজেলা সমাজসেবা অফিসার কাঞ্চন কুমার দাস, মেনোনাইট সেন্ট্রাল কমিটি বাংলাদেশ প্রতিনিধি গ্রেগ ভ্যানডেরবিল্ট, প্রোগ্রাম অফিসার জেমস কিস্কুসহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এনএজিআর এর নির্বাহী পরিচালক স্টেফান সরেন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন প্রদীপ হেমব্রম।

অন্যদিকে আতাহার যুগিডাইং এলাকায় আয়োজিত অনুষ্ঠানে মাঝি ও পারগানা পরিষদের সভাপতি কর্নেলিউশ মুরমুর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন সদর উপজেলা সমাজসেবা অফিসার কাঞ্চন কুমার দাস। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন পারগানা পরিষদের উপদেষ্টা আমীন হেমরম, জাইকার কর্মকর্তা ইমরান আলী, সহকারী শিক্ষক মাদল হাঁসদা, এসআইএল ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ এর এরিয়া ম্যানেজার নিকোলস মুরমু সহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।

সাঁওতাল বিদ্রোহ দিবসের প্রবন্ধ পাঠ করেন এনএজিআর এর প্রোগ্রাম ম্যানেজার প্রদীপ হেমব্রম। আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন এনএজিআর এর নির্বাহী পরিচালনা পর্ষদ এর সদস্য ও উত্তরবঙ্গ আদিবাসী ফোরাম কেন্দ্রীয় কমিটি সভাপতি হিঙ্গু মুরমু, রবীন্দ্রনাথ হেমব্রম, ০৩নং ঝিলিম ইউপি সদস্য মাসুদ পারভেজ প্রমুখ।

এনএজিআর এর নির্বাহী পরিচালক বলেন, মেনোনাইট সেন্ট্রোল কমিটি (এমসিসি)-র অর্থায়নে সাঁওতালি ভাষায় রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার ৪টি উপজেলায় ১৫ টি প্রাক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষা প্রদান করা হচ্ছে। এছাড়াও এনএজিআর অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর মধ্যে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, শান্তি স্থাপন, ঐতিহ্য-সংস্কৃতি সংরক্ষন এবং সামাজিক সচেতনতা নিয়ে কাজ করছে। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে শিক্ষিত এবং বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ সরকারকে সহযোগিতা করা।

উত্তরবঙ্গ আদিবাসী ফোরাম কেন্দ্রীয় কমিটি সভাপতি হিঙ্গু মুরমু বলেন আজকে সাঁওতাল বিদ্রোহের ১৭০ বছর পরেও সাঁওতাল জাতিসহ অন্যান্য অনগ্রসর জনগোষ্ঠী নিপীড়িত। ব্রিটিশ মহাজন, জোতদারদের বিরুদ্ধে এই সাঁওতালরা তীর ধনুক নিয়ে বুক চিতিয়ে রুখে দাড়িয়েছিল। আজ আবারও আমাদের সংঘবদ্ধ হতে হবে সমাজে বৈষম্যর বিরুদ্ধে সম্মিলিতভাবে তবেই সিধু-কানহু-চাঁদ-ভৈরব নেতৃত্বে সংগঠিত হুল স্বার্থক হবে।

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সাঁওতালি ঐতিহ্য ও রীতির ডোবঃ-যোহার, সাঁওতালি দং, লাগড়ে, সহরায়, লাকেড়বানাম, দাঁসায়, ডানটা গান ও নাচ প্রদর্শন করা হয়।

উল্লেখ্য, ১৮৫৫ সালে ৩০ জুন ব্রিটিশ মহাজন, জোতদারদের বিরুদ্ধে এই সাঁওতালরা তীর ধনুক নিয়ে বুক চিতিয়ে রুখে দাড়িয়েছিল সাঁওতালরা। এই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেযন চার মুরমু ভাই- সিধু, কানু, চাঁদ ও ভৈরব।

‘আমি আবার আসব, আবার সারা দেশে বিদ্রোহের আগুন জালিয়ে তুলব।’ -কানু মুরমু ফাঁসির মঞ্চ থেকে এ ঘোষণা দিয়েছিলেন ১৮৫৬ খ্রিষ্টাব্দের ২৩ ফেব্রুয়ারি। ভগনাডিহির নিকট পাঁচকাঠিয়া বটবৃক্ষে বেলা পৌনে ২টা নাগাদ ফাঁসির মঞ্চে তোলা হয় কানু মুরমুকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *